কেমন করে হবো_Ankita Ganguly

কেমন করে হবো

অঙ্কিতা গাঙ্গুলী 

ইচ্ছে হলেই হতাম যদি যা হতে চায় মন

রোজ দুপুরে হতাম আমি পানকৌড়ির বোন।

কিংবা যদি ড্রয়িং খাতার নীল রং টা মাখি,

কেমন সহজে হয়ে যাবো ওই মাছরাঙা রং পাখি।

কিংবা ধরো হতাম যদি মেঘের দেশের রানী

হোম ওয়ার্ক এর অঙ্ক খাতা ভিজিয়ে দিতেও জানি।

ইচ্ছে হলেই হতে পারি কাঁসাই নদীর চর,

হতেও পারি দুয়োরানীর ছোট্ট কুঁড়ে ঘর।

হতাম যদি চাঁদের দেশের চরকা কাটা বুড়ি,

অথবা হয়ে রাজপুত্র পক্ষিরাজে উড়ি।

কখনো আবার মন হতে চায় প্রজাপতির ছানা,

যখন খুশি উড়ে যেতে নেই তো কোনো মানা।

ঠাম্মি যখন রাতের বেলা ভূতের গল্প বলে

ইচ্ছে করে নাম দিয়ে দিই আমিও ওদের দলে।

গুপী বাঘার মতন পেলে ভুতের রাজার বর

যেতে পারি ফেলুদা বা বঙ্কুবাবুর ঘর।

মা বলেছে বই পড়লে সবই জানা যায়।

কোন বইতে লেখা থাকে এসব হওয়ার উপায়?

বাবা মায়ের স্বপ্ন আছে আমায় নিয়ে কত,

আমার মনের ইচ্ছেগুলো নয়তো তাদের মত!

তাসের ঘর_Sayan Kansabanik

। তাসের ঘর ।। 

প্রেম যেমন সুখের রাজপ্রাসাদ বানাতে পারে

ঠিক তেমনই এই প্রেমই মুহূর্তে তাসের ঘরের মতো

নিঃশব্দে ভেঙে দিয়ে যায়

নিজের শেষ অবলম্বন দিয়ে বানানো সুখবাড়িটা।

আমরা শুধুই প্রেমের কাছে ক্ষণিকের অতিথি মাত্র।

‘আমার’ বলে কিছু হয়না পৃথিবীতে।

যতক্ষণ আমরা ভালো থাকি ততক্ষণই সুখ আমাদেরই অধিকৃত।

নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পর একমুহূর্তও যেন একেকটা অসহনীয় অধ্যায়

যার শুরু থাকলেও শেষ জানা নেই।

কাছের মানুষটা যখন সবকিছুকে ভাসিয়ে দেয় নিয়তির পথে,

তখন ভাগ্যেরও পরিহাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা।

তারপরেও কিছু অনুভূতি থেকে যায়

বিপর্যয়ের কালো মেঘের অন্তরালে ঘনীভূত কালশিটের মতো।

এদের কোনো নাম হয়না,ঠিকানা হয়না,হয়না কোনো আগলে রাখার মতো মানুষ।

দগ্ধে যাওয়া এই মনের বিতৃষ্ণায় মরে যায় একদা সবুজ স্বপ্নগুলো।

সব ছাই উড়িয়ে অমূল্যরতন পাওয়া যায়না।

কিছু চোখের জল হয়ে ঝড়ে পড়ে। 

যেই ইচ্ছেরা কোনো এক পরিযায়ীর হাত ধরে ডানা মেলতে চেয়েছিল অনন্ত আকাশের বুকে

তারা হঠাৎই নিঃসঙ্গ হয়ে যায়,

সেই বুকেই এসে বেঁধে অভিযোগ,দোষারোপ আর ব্যর্থতার শানিত তীর।

রক্ত ক্ষরিত হতে হতে রক্তের শেষ বিন্দুটুকুও

তৃষ্ণার্তের মতো গুমরে ওঠে অতীতের বিষণ্ণতায়।

তারপরেও আমাদের একটা ছাদ হয়,আমাদের যত্নে বেড়ে ওঠে একটা জুঁই চারা।

সব অতীত ভুলে আমরা আবার ‘ঘর ঘর’ করে মরি।

কিন্তু একটা ঘর মানুষকে কতোটাই বা আশ্রয় দিতে পারে,

যদি না ঘরের মানুষটাই আপন হয়!

নাম: সায়ন কংসবনিক

ঠিকানা: নবদ্বীপ

ফোন: 9775169985

ReplyForward

খোকার মা_Plaboni

খোকার মা 

আমি মৃণালিনী সেন,

কিন্তু পাড়ায় সবাই চেনে খোকার মা বলে।

এতএত বছর আমি নিজের পরিচয় ভুলেই গিয়েছিলাম,

শুধু “খোকার মা”আমি এটা মনে রাখতাম।

জানো আমার খোকা সময়ের আগে জন্মেছিল,

“এ ছেলে বাঁচবে না”ডাক্তার বলে দিয়েছিল।

আমি পণ নিয়েছিলাম খোকাকে আমি বাঁচাবো।

খুব তো পয়সা ছিল না আমাদের,

তার উপর জাঁকিয়ে বসেছিল অভাব ও।

ধার করে দুধ আনতাম আমার খোকার জন্য,

আরো কতকিছু যাতে আমার কোল না হয় শূন্য।

বেশি দিন এভাবে চলল না,

দেনা করতে করতে একদিন সব চলে গেল,

আশ্রয়টুকুও আর থাকলো না।

আমাদের ঠিকানা হলো রেলের বস্তিতে,

কিন্তু জানিস খোকা,

তোকে সঙ্গে নিয়ে থাকতাম খুব স্বস্তিতে।

আস্তে আস্তে তুই বড় হলি,

প্রাণটা জুড়িয়ে যেত শুনে তোর মুখে আধো বুলি।

ছোট থেকেই তোর পড়ার প্রতি খুব টান,

মনে আছে খোকা তুই বলতিস,

আমি বাড়াবো তোমাদের মান।

রাতে যখন ট্রেনের শব্দে ভয়ে উঠতিস কেঁদে,

আমি দুই হাতে তোকে বুকের মধ্যে নিতাম বেঁধে।

তুই বলতিস “মা” বড় হয়ে

আমি তোমায় নতুন বাড়ি দেবো,

তুমি,আমি,বাবা একসঙ্গে সেখানে থাকবো।

দেখতে দেখতে মাধ্যমিক দিলি,উচ্চমাধ্যমিক দিলি,

সেখানে ভালো নম্বর পেয়ে

স্কলারশিপের টাকায় কলেজে ভর্তি হলি।

তার কিছুদিন পর তোর বাবা গেল চলে,

তুই তখন আমার একমাত্র আশা হোলি।

বিয়ে করলি নিজের পছন্দমত,

আমাকে জানালে খুব কি ক্ষতি হতো।

একদিন এলি ঠিক-ই আমার এই ছোট্ট ঘরে,

তবে তোর সব জিনিস নিয়ে যাবার তরে।

বললি,”তোমার জন্য নতুন ঘর ঠিক করেছি

চলো তোমাকে সেখানে রেখে আসি”।

ভাবলাম তুই নিয়ে যাবি তোর আর বৌমার কাছে,

কিন্তু একি!এখানে তো দেখছি বৃদ্ধাশ্রম লেখা আছে!

খোকা,তোকে বড় করার দাম এভাবে দিলি,

আমাকে এতটাই পর ভেবে নিলি।

আজ বারো বছর হলো তোকে দেখিনা,

তোর মা-কে একটুও মনে পরেনা?

আয় না খোকা একবার তোর মায়ের কাছে,

দুচোখ ভরে দেখবো যতদিন দেহে প্রাণ আছে।

তুই না খেয়ে দৌড়বি সারা ঘরময়,

বিশ্বাস কর খোকা তোকে কাছে পেতে বড্ড ইচ্ছা হয়।

শুনেছি তোর ছেলে হয়েছে,কি নাম দিলি?

তাকে তার ঠাম্মার কথা কক্ষনো বলেছিলি?

তোর ফ্ল্যাটে আমার কোন ছবি আছে?

খোকা,তোর বৃদ্ধ মায়ের কোনো স্মৃতি মনে আছে!

আমি এখানকার সবাইকে বলেছি,

তুই একজন ডাক্তার,

ওরাও তোকে দেখতে চেয়েছে একটি বার।

জানিস আজ আমি বিছানায়,বুকে খুব ব্যথা,

এখানকার সবাই ভেবেছিলো 

তোকে জানাবে আমার কথা।

আমার খোকা একজন ডাক্তার,তবু হায়!

আজ আমি মরতে চলেছি বিনা চিকিৎসায়।

আমি ওদের বলেছি

আমি মারা গেলে তোকে যেন খবর দেয়,

তুই তখন একটু আসিস যে কোনো বাহানায়।

চিরকাল তুই থাকবি আমার হৃদয়ে,

আর আমি বাঁচবো আমার “খোকার মা” হয়ে।

                                                            ইতি-খোকার মা

সাদা ক্যানভাস_Madhurima Banerjee

সাদা ক্যানভাস

সাদা ক্যানভাসের ফাঁকে আলপনা খোঁজে রোহিত,

সেদিন নীল জামা পরে এসেছিল স্যানোরিটা।

ফাঁকা ক্যানভাসে নীল রং ঢেলে কেউ কি করেছে মোহিত?

স্যানোরিটার গালে টোল , নাকি সে আজ অ্যাংরিটা?

নন্দনে ৪টের শো নাকি মধুসূদন মঞ্চের নিয়ন আলো

রোহিত ভাবতে থাকে কোনটা তার মন করে ভালো।

ঐন্দ্রিলা, দীপান্বিতা, মালবিকা, খুঁজে চলে ক্যানভাসে নানা মুখ

মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, আসলে কোনটা সুখ?

রাতের নগরী আরও পসরা সাজিয়ে যখন নিভৃতে

রোহিত ভাবে স্যানোরিটা দেখা দেবে নাকি অফবিটে?

মেয়ো রোড ধরে হাটতে হাটতে চিন্তায় ছেদ পড়ে

ময়দান বড় মন টানে আজ ক্যানভাসখানি ছেড়ে।

সাদা ক্যানভাস একলাই থাকে যেন বোবা, কালা,

জুঁই ফুলের গন্ধটা দিয়ে হোক না গলার মালা।

স্যানোরিটা করে মন শুধু উদাস বাউল হয়ে

আসবেনা কি কোনওদিন অপেক্ষায় সময় যাবে বয়ে?

রাত ৯টা বাজে, বোঝা গেল সোহাগিনীর উত্তর

লিখতে পারলনা আসবেনা বলে একটা শুধু পত্তর।

পার্কস্ট্রিটের প্রিয় বেকারীর শীতের গন্ধের কেক

এনেছিল ভেবে খুশি হবে প্রেয়সী, আসলে সব ফেক।

হঠাৎ দূরে মনে হল কলরোল যেন বেশী

অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে দূরে, কোনও এক এলোকেশী।

ভিড়ের বলয় কাটিয়ে, হাতের আংটি রোহিতেরই দেওয়া

স্যানোরিটা শত যোজন দূরে, আর যাবেনা পাওয়া।

সাদা ক্যানভাস সাদাই রইল নীল রং আজ ফিকে

রোহিত হাঁটছে, আলো নিভছে, অন্ধকার চারিদিকে।